Header Ads

কিডন্যাপ পর্ব 4

 ? পর্ব-৪??

?
.
.
-: মে আই কাম ইন স্যার।

-: ইয়েস কাম ইন।

-: বল রাফি,,তোমাকে যা করতে বলেছিলাম তুমি তাই করেছো তো।

-: ইয়েস স্যার (রাফি)

-: বলে ফেলো,,,কি কি ডিটেলস এনেছো।(নিলয়)

-: স্যার আমরা যে মেয়েটাকে মিনিস্টারের মেয়ে ভেবে তুলে এনেছিলাম,,,,তার নাম হলো তিথি আহমেদ। বাড়ি হলদিয়া। ছোটবেলায় মা সুইসাইড করেছে। তখন তার বয়স ছিল মাত্র তিন বছর।।মা মারা যাবার এক মাসের মাথায়,, বাবা অন্য আরেকজনকে বিয়ে করে ফেলেন।। তিথির মামা মিস্টার নজরুল শেখ,, নিজের বোনের মৃত্যুকে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে মনে করেন নি।।তাই তিনি তিথির বাবার বিরুদ্ধে কেস করেছিলেন।। কিন্তু তিনি হেরে যান। যখন তিনি দেখলেন যে,,,তিথি তার বাবা এবং সৎ মার কাছে ভালো নেই,,তখন তিনি তিথিকে তার বাড়িতে নিয়ে আসেন।।নজরুল সাহেব পেশায় একজন প্রফেসর।তার একটা ছেলে আছে,,ছেলেটা তিথির থেকে বড়।।ছেলেটার নাম আসফি,,,,কিছুদিন আগে আসফি বিদেশ থেকে এমবিবিএস কমপ্লিট করে দেশে ফিরেছে।এখন সে একজন সরকারি হসপিটালে ডাক্তার হিসেবে নিযুক্ত।সে তিথি কে নিজের বোনের মতন ভালবাসে।।তিথির বয়স ১৭। এই বছর ক্লাস টুয়েলভে উঠলো। মামা মামি এবং দাদার খুব আদরের।

-: বাব্বা….রাফি তুমি তো পুরো তিথির নামের লাইব্রেরী তুলে এনেছ।। ভেরি গুড,,আই এম ইমপ্রেসড।

-:কি যে বলেন না স্যার।(লজ্জিত ভাবে বলল রাফি) একবার কাজে ভুল করেছি বলে কী আর ভুল করতে পারি।।তবে আর একটা কথা শুনেছি তিথির বাবার সম্পর্কে,,তিনি নাকি বিভিন্ন কালো ব্যবসার সাথে জড়িত,,,তাই তিথির মা নাকি তাকে সবসময় বলতেন এই ব্যবসা থেকে সরে আসতে,,,,কিন্তু তিনি তার কোন কথাই শুনতেন না।। তিথির মা যেদিন সুইসাইড করে,,, তার ঠিক দু’দিন আগে নাকি তিথির মা আর তিথির বাবার খুব ঝগড়া ঝাটি হয়,,, পরে তিনি নজরুল সাহেবের বাসায় গিয়ে উঠেছিলেন।। আর সুইসাইড করার দিন,,,নাকি তিথির বাবা নিজে গিয়ে তিথির মাকে নজরুল সাহেবের বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছিলেন।।

-:হুম।।।।তিথির মার মৃত্যুর মধ্যে আমি একটা রহস্য রহস্য গন্ধ পাচ্ছি রাফি। যাই হোক আগে এই বাঁচাল মেয়েটাকে আমি সামলায়।।উফফ জীবনটা তেনা তেনা করে দিল।।

-:কেন সে আবার কি করলো স্যার।।(বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল রাফি)

-:আর বোলো না,,সে সব কথা থাক। আগে বল মিনিস্টারের মেয়ের কি খবর।।

-: স্যার আর বলবেন না,, মেয়েটাকে একদিন খেতে দিইনি বলে বাসি রুটি গপাগপ মেরে দিয়েছে।।(হেসে হেসে বলল রাফি)

-:বল কি।।(বাঁকা হেসে)

-:হ্যাঁ স্যার।।

-:আচ্ছা ঠিক আছে তুমি এখন আসো,,আমার আবার বাড়ি যেতে হবে।।

-:ওকে স্যার,,,আসছি ।।

তারপর কিছুক্ষন নিলয় অফিসের কিছু কাজকর্ম সেরে,,,বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিল। রাত আটটার সময় নিলয় বাড়ি পৌঁছালো।।
.
?
.
বাড়িতে ঢুকে।।নিলয় তো পুরো হা হয়ে গেল।। ডাইনিং রুমটাকে দেখে মনে হচ্ছে কিছুক্ষণ আগে,,,, বিশাল এক টাইফুন এসছিল,,,কারন চারিদিকে কেকের প্যাকেট,,,বিস্কুটের প্যাকেট,,,মিষ্টির প্যাকেট,,, চকলেটের প্যাকেট,, জুসের খালি ক্যান পড়ে রয়েছে।।
.
.
আর তিথি লিভিং রুমের সোফার উপর এক পা তুলে সোফার উপরে শুয়ে রয়েছে।। আর শুয়ে শুয়ে পপকন খাচ্ছে আর ডোরেমন কার্টুন দেখছে,,, আর গান গাইছে;

-: মে কিসি কা সপ্না হু,,যো আজ বানগে ই হে সাচ…… তারপর মাঝখানে লালালালা বলে চালিয়ে দিলো গানটা ভুলে গেছে বলে,,,তারপর আবার ডোরেমন ও ডোরেমন বলে গান করতে লাগলো।

নিলয় তো পুরো রেগে বোম হয়ে গেছে,,,এমনিতে সে অপরিষ্কার জিনিস একদমই পছন্দ করে না।।।তার ওপর তিথি পুরো ঘরটাকে ডাস্টবিনের মতো করে ফেলেছে আবার বসে বসে ডোরেমন ডোরেমন গান করছে।।তাই সে রেগে গিয়ে বিশাল জোরে এক হুংকার দিল।।তিথি তো নিজের নাম এত জোরে এভাবে শুনে থতমত খেয়ে গেল।।তারপরে পিছনে তাকিয়ে দেখল,,, নিলয় রক্ত লাল চোখে দাঁড়িয়ে আছে তার দিকে,, মুখটা লাল বর্ণ ধারণ করেছে।।তিথি এতটাই ভয় পেয়েছিল যে পপকন এর জায়গায় নিজের আঙুলটাকে খচ করে কামড়ে ধরল।।।তারপরে জরে চিৎকার করে উঠল-;

-:আহ আহ আহ আহ মরে গেলাম,,মরে গেলাম,, রে আমি মরে গেলাম।।

তিতির এরকম আওয়াজ শুনে নিলয়ের রাগ এক নিমেষেই উড়ে গেল।তারপরে সে ব্যাস্ত হয়ে তিথির কাছে দৌড়ে গেল।। তারপর আঙুলটা ধরে বললো-;

-:কি হয়েছে দেখি দেখি।

বলে আঙুলটা টার দিকে ভালোভাবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে। তারপর তিথির দিকে তাকালো,,, এবং তাকিয়ে বললো-;

-:এইভাবে কেউ খায় নাকি।।(রেগে গিয়ে)

তিথি তখন মিনমিন করে বলল-;

-:আপনি যেভাবে ষাঁড়ের মত চিৎকার করলেন।। তো আমি আঙুল খাবোনা তো কি খাবো শুনি।।উফ্ বাবা এত জোরে কেউ চিৎকার করে।।

-:কি এই মেয়ে তুমি আমাকে কি বললা।আমি ষাঁড়।।তোমার সাহস তো মন্দ না,,আমার ঘরের এই কি অবস্থা করেছো শুনি।।এক বেলা বাইরে গেছিলাম,,,তার মধ্যে এই অবস্থা করে ফেলেছ।।

-: এই শুনুন এইভাবে আমাকে জ্ঞান দিতে আসবেন না,,সারাদিন একা একা ঘরে কি করব শুনি।।আর ঘরটা না হয় টুনির মা পরিষ্কার করে দেবে। কিন্তু আমার বুঝি মন খারাপ হয় না সারাদিন ঘরে একা একা বসে থাকতে।????

-:হোয়াট!!হু ইস টুনির মা।।

-:কেন আপনাদের ঘরের যে মহিলা কাজ করে,,,সে টুনির মা।।

-:হোয়াট রাবিশ ও আবার টুনির মা হতে যাবে কেন।ওর নামতো শেফালী।।

-: আপনাকে নিয়ে আর পারা গেল না।।???আমি বেশি কথা বলতে পারবোনা।।আর এই যে শুনুন এই লিস্টটা ধরুন তো।।

বলে একটা লিস্ট নিলয়ের দিকে এগিয়ে দিল।।নিলয় কিছুক্ষণ তিথীর দিকে তাকিয়ে তারপর লিস্টর দিকে তাকিয়ে,,,নিলয় হা হয়ে গেল তারপর তিথির দিকে তাকিয়ে বললো-;

-:এসব কি!!!

-: কেন আপনি কি চোখে কানা। শুনুন দুটো কুর্তি,, দুটো পালাজো,,আর একটা মিকি মাউস আঁকা টি শার্ট আর একটা লং স্কার্ট নিয়ে আসবেন।।কাল সকাল থেকেই একই জামা পড়ে আছি,,শায়র নিয়ে ও আমাকে এই একি জামা পরতে হল। আপনিতো আর বলে কয়ে আমাকে কিডন্যাপ করেননি,,,যদি আমাকে আগে থেকে বলতেন তাহলে না হয় কিছু জামা সঙ্গে করে নিয়ে আসতাম।।। কিন্তু এখন আর কি করা যাবে।কালকে আমার শাওয়ারের আগেই যেন আমি জামা গুলো পাই।। ওকে গুড নাইট আমার না প্রচুর ঘুম পাচ্ছে।।আর আমার পেট পুরো ভরে গেছে।।আর আমার জন্য খাবার রাখতে হবে না,,,যদি খিদে পায় তো তিন-চারটে পরোটা রেখে দেবেন আমার জন্য,,আর একটু তরকারিও রেখে দেবেন।ওকে আর শুয়ে পরবেন তারাতাড়ি টাটা গুড নাইট।

এই বলে তিথী উপড়ে চলে গেল। আর নিলয় তো হা করে তাকিয়ে থাকলো তিথীর যাওয়ার পথে। তারপর নিলয় মনে মনে বলল,

-: মাঝে মাঝে আমি নিজেই কনফিউশড হয়ে যায় যে আমি এই মেয়েটা কে কিডন্যাপ করেছি নাকি এ মেয়ে নিজেই আমাকে কিডন্যাপ করেছে, হে আল্লাহ আমাকে বাঁচাও।?????

তারপর নিলয় রাতের খাবার খেয়ে তিথির জন্য ডাইনিং টেবিলে খাবার রেখে উপরে চলে গেল।
.
?
.
পরেরদিন নিলয়ের ঘুম ভাঙ্গল তিথীর ডাকে।নিলয় বেশ বিরক্ত হয়ে বলল;

-:উফ্ তিথী ঘুমাতে দেও তো।ডিস্টার্ব করো না।(ঘুম জড়ানো কন্ঠে)

-: আরে আমার জামা আনতে বলেছিলাম এনেছিলেন।

-: হে রামু চাচাকে বলে অনিয়ে নিয়েছি,,,নিচে গিয়ে রামু চাচা কে জিজ্ঞাসা কর,,তোমাকে দিয়ে দেবে। এখন যাও প্লিজ আমাকে ঘুমাতে দাও।

-:ওকে।

এই বলে তিথি চলে গেল। আজকে যেহেতু রবিবার তাই নিলয়ের অফিস ছুটি। বেলা দশটার সময় ঘুম থেকে উঠল তারপর বেড টি সেবন করে,,,,, ওয়াশ রুমের দিকে গেল। কিন্তু ওয়াশরুমের ভিতরে ঢুকা মাত্র,,,, নিলয় চিৎপটাং হয়ে গেল।

-:আআআআআআআআআ মাআআআআআ।।(ব্যথায় কাতরাচ্ছে)

নিলয় চিৎকার শুনে বাড়ির সমস্ত কাজের লোক নিলয় ঘরে এসে হাজির হলো তিথী ও সঙ্গে ঘরে ঢুকলো এবং নিলয় কে দেখে বলতে লাগল;

-: হায় আল্লাহ,,এই অবেলায় বাথরুমে বসেই মা কে স্মরণ করতে হলো।আচ্ছা আর কি কোন জায়গা পেলেন না মার কথা মনে করার জন্য,,,, মানছি মাকে সবাই ভালবাসে তাই বলে বাথরুমে।

-: তিথি ফাজলামো হচ্ছে আমার সাথে।আমি এখানে পড়ে গিয়েছি,, ব্যথা পেয়েছি,, আর তুমি ওখানে আমার সাথে মশকরা করছ।।আগে বল আমার বাথরুমে সাবান জল আসলো কোথা থেকে। (রেগে চিৎকার করে বলে উঠলো)

নিলয়ের কথা শুনে সবাই চুপ করে রইল আর তিথী ও একদম মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।নিলয় এবার চিৎকার করে উঠলো;

-: জিজ্ঞেস করছি তো আমি কিছু,,,,আমার ঘরে সকালবেলা কে এসেছিল।

-: স্যার আপনার ঘরে তো সকালবেলা করে প্রতিদিন শেফালী ই কফি দিয়ে যায়।। কিন্তু আজকের তিথি ম্যাম বললেন যে তিনি আজ নিজের হাতে আপনার জন্য কফি নিয়ে যাবেন।(একজন সার্ভেন্ট বলল)

সার্ভেন্ট দের কথা শুনে নিলয়ের বুঝতে বাকি রইল না এই মহৎ কাজটা কে করেছে। নিলয় রাগী চোখে তিথির দিকে তাকিয়ে রইল আর তিথি অসহায় ভাবে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে রইল।। তারপর নিলয় সার্ভেন্টদের সহায়তায় খাটে বসল এবং সবাইকে চলে যেতে বলল।।তিথি যেই মাত্র বাইরে বের হবে,,ঠিক তখনই নিলয় রাগী স্বরে বলে উঠলো;

-:তোমাকে আমি যেতে বলেছি??চুপচাপ এখানে দাড়াও,, আর আমার সামনে এসো,,,,হারি আপ।।

তিথী অসহায় ভাবে কিছুক্ষণ নিলয়ের দিকে তাকিয়ে থাকল,,,তারপর গুটি গুটি পায়ে নিলয়ের এদিকে এগোতে লাগবে।

No comments

Theme images by Petrovich9. Powered by Blogger.